নির্বাচনী হালচাল: রামুতে এগিয়ে আছেন যারা

সোয়েব সাঈদ, রামু :

১১ নভেম্বর রামুর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচণ। নির্বাচণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে নির্বাচন। উৎসব মুখর পরিবেশে গানে গানে স্লোগানে সড়ক থেকে ঘর পর্যন্ত ভোট ভিক্ষা করছেন প্রার্থীরা।

ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। চায়ের দোকান থেকে সেলুন, বাসা থেকে অফিস রামুর সর্বত্রই এখন আলোচনায় ইউপি নির্বাচন। সেই নির্বাচণের হাওয়া কেমন চলছে তা জানতেই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ঘুরে বেড়িয়েছি দৈনিক কক্সবাজারের প্রতিবেদকরা।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রামু উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৭ জন লড়ছে। উৎসবমুখর পরিবেশেই এখনো পর্যন্ত চলছে প্রচারণা।

রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সূত্র জানায়, রামু ১১ টি ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নৌকার প্রার্থীদের জিততে লড়তে হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান সহ জনপ্রিয় শক্তিশালী নেতাদের।

উপজেলা আওয়ামীলীগের দেয়া তথ্য ও প্রতিটি ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে , রামুর প্রানকেন্দ্র ফতেখারকুলে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো ‘র মধ্যে। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে আরো রয়েছে ফরিদুল আলম চেয়ারম্যান। ওই ইউনিয়নে দুই বিদ্রোহীই নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এছাড়া ফরিদুল আলম গেল ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই চেয়ারম্যান হন।

চাকমারকুলে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে। তবে প্রচার প্রচারণা ও জনপ্রিয়তার কারণে লড়াই হবে নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল আলম প্রকাশ এন. আলমের মধ্যে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগ নেতা ওসমান সরওয়ার মামুন ও জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর অবস্থান ভালো।

খুনিয়াপালংয়ে ৮ জন জন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও মাঠে এগিয়ে রয়েছে নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক আবদুল মাবুদ ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হক।

দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে আওয়ামীলীগ প্রার্থী খোদেস্তা বেগম রীনার সাথে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের।এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো। ইতিমধ্যেই ইউনুছ ভুট্টো পেশী শক্তির জোরে ইউনিয়ন আওয়ামলীগ অফিসকে তার নির্বাচনী অফিস বানিয়েছেন।

ঈদগড়ে ৪ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখি। আওয়ামীলীগ প্রার্থী নুরুল আলম, বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান ফিরোজ ভুট্টো ও বিএনপি নেতা নুরুল আজিম মাইজ্যার মধ্যে যে কেউ হাসতে পারে শেষ হাসি।

গর্জনিয়ায় চেয়ারম্যান পদে ৭ জন মাঠে রয়েছেন। এখানকার সমীকরণে জয়ের মালা পরতে পারেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মুজিবুর রহমান বাবুল কিংবা গোলাম মৌলা চৌধুরীর মধ্যে যেকোন কেউ। এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

কচ্ছপিয়ায় ৭ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। শেষ হাসি হাসতে পারে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন মেম্বার কিংবা বিএনপি নেতা আবু মো. ইসমাঈল ( নোমান) ।
রাজারকুলের ৪ জন প্রার্থী থাকলেও নৌকার মাঝি সরওয়ার কামাল সোহেল ও বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমানের মধ্যেই লড়াই হবে।
রশিদনগরে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মো. হান্নান সিদ্দিকী ও এমপি কমলের অনুসারি বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম। এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মোয়াজ্জম মোর্শেদ।
জোয়ারিয়ানালার প্রার্থী ৬ জন হলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী কামাল শামসুদ্দীন আহমদ প্রিন্সকে জিততে হলে ডিঙ্গাতে হবে এমপি কমলের পিএস মিজানের শ্বশুর বিএনপি নেতা গোলাম কবির এবং জামায়াত নেতা রাশেদুল ইসলামকে। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে যুবলীগ নেতা আবছার কামাল সিকদার, আনছারুল আলম ও এম. এম নুরুচ্ছাফা।

এবিষয়ে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল বলেন, রামুর প্রতিটি ইউনিয়নেই এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। তারা কোথাও কালো টাকার প্রভাব খাটাচ্ছে। কোথাও স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থীদের জয়ী করতে দিনরাত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট ভিক্ষা চাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যারা নৌকার বিরোধীতা করছে কিংবা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করছে তাদেরকে দল থেকে বৃহিষ্কার করা হয়েছে।

জেলা সাধারন সম্পাদক বলেন, মানুষ নৌকায় ভোট দিতে চায় এটা আমি বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে বুঝেছি। ১১ নভেম্বর রাতে এটির প্রমান পাবেন সকলে।